মানুষের শরীরে রোগ বাড়ার কারণ ও প্রতিরোধের উপায়

মানুষের শরীরে রোগ বাড়ার কারণ ও প্রতিরোধের উপায়:

ঢাকা, ২১ মার্চ ২০২৫: আজকের দ্রুতগতির জীবনযাত্রা, পরিবেশ দূষণ এবং খাদ্যাভ্যাসের পরিবর্তনের কারণে মানুষের শরীরে রোগব্যাধি বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সংক্রামক ও অসংক্রামক উভয় ধরনের রোগই এখন বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। সাম্প্রতিক তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে হৃদরোগ, ডায়াবেটিস, ক্যানসার এবং শ্বাসকষ্টজনিত রোগের প্রকোপ বাড়ছে, যা জনস্বাস্থ্যের জন্য উদ্বেগজনক।

 

রোগ বাড়ার প্রধান কারণগুলো:

১. অস্বাস্থ্যকর জীবনযাত্রা: বিশেষজ্ঞদের মতে, অতিরিক্ত ফাস্ট ফুড গ্রহণ, শারীরিক পরিশ্রমের অভাব এবং অনিয়মিত ঘুম মানুষের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমিয়ে দিচ্ছে। বাংলাদেশে ডায়াবেটিস রোগীর সংখ্যা গত দশকে প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে, যার পেছনে প্রধান কারণ হিসেবে চিনিযুক্ত পানীয় ও প্রক্রিয়াজাত খাবারের ব্যবহার চিহ্নিত করা হচ্ছে।

 

২. পরিবেশ দূষণ: বিশ্বব্যাংকের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে পরিবেশ দূষণের কারণে প্রতি বছর ২৮% মৃত্যু ঘটে। বায়ু দূষণ শ্বাসতন্ত্রের রোগ বাড়াচ্ছে, আর দূষিত পানি টাইফয়েড, জন্ডিস ও চর্মরোগের কারণ হচ্ছে।

 

৩. ভাইরাস ও সংক্রমণ: ডেঙ্গু, করোনাভাইরাসের মতো সংক্রামক রোগ এখনও হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। চিকিৎসক হাসান শাহরিয়ার কল্লোল জানান, “শরীরে জীবাণুর প্রবেশ এবং তার আক্রমণ ক্ষমতা রোগের তীব্রতা নির্ধারণ করে।”

 

৪. মানসিক চাপ: মানসিক চাপ ও উদ্বেগের কারণে হাইপারটেনশন এবং হৃদরোগ বাড়ছে। এক গবেষণায় দেখা গেছে, শহরাঞ্চলে বসবাসকারীদের মধ্যে মানসিক চাপজনিত রোগ ৩০% বেশি।

 

৫. জিনগত ও বয়সজনিত কারণ: বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে। জিনগত কারণে ক্যানসার ও ডায়াবেটিসের ঝুঁকিও বাড়ছে।

 

প্রতিরোধের উপায়:

বিশেষজ্ঞরা রোগ প্রতিরোধে কিছু কার্যকর পদক্ষেপের পরামর্শ দিয়েছেন:

 

১. পুষ্টিকর খাদ্য গ্রহণ: পুষ্টিবিজ্ঞানীরা বলছেন, ভিটামিন সি (লেবু, কমলা), ভিটামিন বি (দুধ, কলিজা) এবং আয়রন (পালংশাক, মাংস) সমৃদ্ধ খাবার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। আদা, রসুন ও হলুদের মতো প্রাকৃতিক উপাদানও উপকারী।

 

২. শারীরিক ব্যায়াম: প্রতিদিন ৩০ মিনিট হাঁটা বা ব্যায়াম শরীরের রক্ত সঞ্চালন বাড়ায় এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা শক্তিশালী করে।

 

৩. পরিচ্ছন্নতা ও হাইড্রেশন: পরিষ্কার পানি পান এবং হাত ধোয়ার অভ্যাস সংক্রমণ কমায়। ডিহাইড্রেশন এড়াতে দিনে ২-৩ লিটার পানি পান করা জরুরি।

 

৪. মানসিক স্বাস্থ্যের যত্ন: মেডিটেশন ও পর্যাপ্ত ঘুম (৬-৮ ঘণ্টা) মানসিক চাপ কমায় এবং শরীরকে সুস্থ রাখে।

 

৫. নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা: প্রাথমিক পর্যায়ে রোগ শনাক্তকরণের জন্য বছরে অন্তত একবার স্বাস্থ্য পরীক্ষা করানো উচিত। বিশেষ করে শিশু ও বয়স্কদের ক্ষেত্রে এটি গুরুত্বপূর্ণ।

 

বিশেষজ্ঞদের মতামত:

ঢাকা মেডিকেল কলেজের অধ্যাপক ডা. এম এস এ মানসুর আহমেদ বলেন, “অসংক্রামক রোগের কারণে অকাল মৃত্যু কমাতে স্বাস্থ্য ব্যবস্থার উন্নতি ও জনসচেতনতা বাড়ানো জরুরি। ২০২৫ সালের মধ্যে এই হার ২৫% কমানো আমাদের লক্ষ্য।” এছাড়া, পরিবেশ রক্ষায় সরকারি ও ব্যক্তিগত উদ্যোগ বাড়ানোর তাগিদ দিয়েছেন তিনি।

 

উপসংহার:

রোগের বৃদ্ধি রোধে শুধু চিকিৎসা নয়, জীবনযাত্রার পরিবর্তনও প্রয়োজন। সরকার, সমাজ ও ব্যক্তি পর্যায়ে সমন্বিত প্রচেষ্টা ছাড়া এই সমস্যা মোকাবিলা কঠিন। জনসাধারণকে সচেতন হওয়ার আহ্বান জানিয়ে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, “সুস্থ থাকতে হলে প্রতিরোধই শ্রেষ্ঠ পন্থা।”

Enjoyed this article? Stay informed by joining our newsletter!

Comments

You must be logged in to post a comment.

About Author
Ads